নাবিল গ্রুপ দেশের খাদ্য পণ্যের যেসব বিস্তীর্ন খাতগুলিতে সম্প্রসারন লাভ করেছে, ডাল মিল স্থাপন তার মধ্যে অন্যতম। পুষ্টির দিক থেকে ডাল ঘন খাদ্যের অন্তর্ভূক্ত। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে, বিশেষ করে দক্ষিণ, পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জনসংখ্যার খাদ্য বৃদ্ধিতে ডাল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই অঞ্চলের দেশগুলোতে গ্রীষ্মকালীন এবং শীতকালীন ডালের বিভিন্ন ধরনের চাষ করে। কৃষি ও পুষ্টি বিবেচনায় বাংলাদেশে ডালের উৎপাদন অপরিহার্য। মসুর, মুগ এবং খেসারি এই পণ্যের অন্তর্ভুক্ত, যা মূলত শীতকালে উৎপাদিত হয়। ডাল বিশেষভাবে নিরামিষাশীদের জন্য প্রোটিনের অন্যতম উৎস। ইন্টারক্রপিং বা একই জমিতে একাধিক আবাদ বাংলাদেশে একটি প্রচলিত কৃষি পদ্ধতি। মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি ও জমির সর্বোচ্চ ব্যবহারের জন্য কৃষকরা ইন্টারক্রপিংএর আশ্রয় নিয়ে থাকেন। এ পদ্ধতিতেও ডালের চাষ হয়ে থাকে।
অর্থনীতি এবং খাদ্য সরবরাহের নিরাপত্তা উভয় ক্ষেত্রেই ডাল একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বাংলাদেশে সবচেয়ে প্রচলিত ডাল হলো মসুর। যা বাংলাদেশের সামগ্রিক ডাল উৎপাদনের ৪০.২৩%। সর্বোচ্চ উৎপাদনের পাশাপাশি যেকোনো কৃষি পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রোটিন রয়েছে রয়েছে মসুর ডালে। মসুরের পুষ্টিগুন মাছ কিংবা মাংসের কাছাকাছি। মসুরকে তাই অভাবী মানুষের মাংসও বলা হয়ে থাকে। । মধ্যপ্রাচ্য, চায়না, উত্তর আফ্রিকা, ভারত, বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিন ইউরোপ ও দক্ষিন-পূর্ব যুক্তরাষ্ট্র ইত্যাদি উপক্রান্তীয় অঞ্চলে মসুরের চাষ হয়ে থাকে। বিশ্বব্যাপী ডাল চাষের ২.৪% অংশ মসুর ডালের। এর প্রতিটি বীজে ২৫.৭% প্রোটিন ও ৫৯% কার্বোহাইড্রেট থাকে। জাতিসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষি অর্গানাইজেশন একটি আদর্শ খাবারের জন্য দৈনিক গড়ে ১৫ গ্রাম মসুর ডাল খাওয়ার পরামর্শ দেয়।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে কৃষক এবং ভোক্তা উভয়ের মধ্যেই মসুর ডালের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।
খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর, বাগেরহাট ইত্যাদি জেলায় ব্যাপকভাবে ডালের চাষ হয়ে থাকে। ভৌগলিকভাবে এই এলাকার পরিবেশ মসুর চাষের জন্য উপযোগী। প্রথমদিকে বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট থেকে উত্পাদিত উন্নত জাতের মসুর ডালগুলি পরিক্ষামূলকভাবে এই অঞ্চলে চাষ করা হয়। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই স্থানীয় কৃষকরা মসুর চাষ করে ব্যাপক মুনাফার সম্ভাবনা দেখতে পায়। বাংলাদেশে মসুর উৎপাদন অব্যাহত থাকলে অদুর ভবিষ্যতে বিদেশেও মসুর রপ্তানি করা যাবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়াও দেশের অন্যান্য প্রান্তিক অঞ্চলেও বিএআরআই কর্তৃক উৎপাদিত উচ্চ-ফলনশীল মসুরের বীজ ছড়িয়ে পড়েছে। যার ফলে দেশের সামগ্রিক উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।
নাবিদ গ্রুপ ২০২১ সালে অটো ডাল মিল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশের ডালের বাজারে নিজের স্বতন্ত্র অবস্থান ঘোষনা করেছে। নাবিল ডাল মিলের দুটি ইউনিট রয়েছে। সর্বোচ্চ মান ও ধারনক্ষমতাসম্পন্ন এই মিলটি রাজশাহীর পবা উপজেলার দাওকান্দি গ্রামে নাবিল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে অবস্থিত রয়েছে। এই মিলের মসুর ইউনিট প্রতিদিন গড়ে ৮০০ মেট্রিক টন আর এংকর ইউনিট ইউনিট ৪০০ মেট্রিক টন ডাল উৎপাদন করে।
ডাল চাষে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন এবং বৈদেশিক মুদ্রার ক্ষয় কমানোর জন্য, বাংলাদেশ সরকারের নিয়োজিত কর্মকর্তা, গবেষক এবং কৃষি বিভাগের সমন্বয়ে দেশব্যাপী ডাল বর্ধন ও উন্নয়ন উদ্যোগ শুরু হয়েছে। এর গবেষণার দিকটি ইশ্বরদীতে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (BARI) ডাল গবেষণা কেন্দ্র দ্বারা পরিচালিত হয়। ১৯৮০ এর দশকের গোড়ার দিকে, যখন বাংলাদেশ মসুর ডালের উৎপাদন বৃদ্ধির উপর অধ্যয়ন জোরদার করে তখন থেকে এই প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক সেন্টার ফর এগ্রিকালচারাল স্টাডি ইন দ্য ড্রাই এরিয়াস (ICARDA) সিরিয়ার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের এই গুরুত্বপুর্ন কৃষি উদ্যোগের পাশে দাড়িয়েছে নাবিল গ্রুপ।
স্বয়ংক্রিয় ডাল মিলের ব্যবহার উৎপাদনের বাড়ানোর পাশাপাশি কর্মীদের শ্রম কমিয়ে আনে। একই সাথে বর্জ্য হ্রাস এবং পণ্যের গুণমান বজায় রাখতেও অটো ডাল মিল কার্যকর। যার ফলে কম শক্তি ব্যয় করে ও কম ব্যাবসায়িক ক্ষতি মোকাবেলা করে বেশি পরিমান ডাল উৎপাদন করা সম্ভব, যা মসুরের বাজার সম্প্রসারনে সাহায্য করবে। নাবিল ডাল মিল এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সফলভাবে কাজ করে চলেছে। নাবিল ডাল মিলে প্রস্তুতকৃত পণ্য আজ বাংলাদেশের ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে।