বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৫ তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। যার জিডিপি রয়েছে ৪৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত ২০১৫ সালে বাংলাদেশ একটি নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে এবং অতি শীঘ্রই তা জাতিসংঘ কর্তৃক নিম্ন আয়ের দেশ তালিকা থেকেও বের হয়ে আসবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অদুর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অর্থনীতি এর চারগুন বৃহৎ আকারে গিয়ে দাঁড়াবে। ব্যবসা খাতে বাংলাদেশের সমৃদ্ধি অর্জনের স্বপ্নকে সত্য করে দেখিয়েছেন দেশের স্বনামধন্য ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশের যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে গেছে, নাবিল গ্রুপ তার গর্বিত অংশীদার। এছাড়াও দেশের খাদ্য-পণ্য খাতে দ্রুত সম্প্রসারিত উদ্যোগগুলির মধ্যে নাবিল গ্রুপ অন্যতম।
একটি দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হলো শিল্পোদ্যোগ। একটি সফল শিল্পোদ্যোগ মুনাফা এবং কর্মসংস্থান তৈরির মাধ্যমে জাতীয় অগ্রগতিকে আরও গতিশীল করতে পারে। সে যাত্রায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নাবিল গ্রুপের অবদান প্রসংশনীয়।
নাবিল গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজ শিমুল এন্টারপ্রাইজের নেতৃত্বে ২০০৬ সালের প্রথম দিকে এর ব্যবসায়িক যাত্রা শুরু করে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এই কোম্পানি দেশের শীর্ষ পশুখাদ্য উতপাদক প্রতিষ্ঠানগুলির প্রধান জোগানদাতা হিসেবে জায়গা করে নেয়। যা শিমুল এন্টারপ্রাইজকে দেশের পশুখাদ্য ইন্ডাস্ট্রিতে স্থায়ী ভিত্তি গড়ে দেয়। ২০১০ সালের মধ্যেই শিমুল এন্টারপ্রাইজ দেশে আরও কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের মাধ্যমে নাবিল গ্রুপ হিসেবে সম্প্রসারিত হয়। চাল, ডাল, আটা ও পশুখাদ্যের মিল, সবজি ও বীজ উৎপাদন, কোল্ড স্টোরেজ, ডিম ও মুরগীর ফার্ম, গবাদী পশু ফার্ম, ট্রেডিং, জুট মিল, এবং টিস্যু চাষের কার্যক্রমসহ ২২টি উদ্যোগের সমন্বয়ে নাবিল গ্রুপ জাতীয় বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখছে।
বর্তমানে চারটি মৌলিক শাখায় সকল ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করছে নাবিল গ্রুপ। যেগুলি হলো, ট্রেড ভেঞ্চারস, সার্ভিস ভেঞ্চারস, এগ্রো ও ফুড এন্ড বেভারেজেস। নাবিল ট্রেড ভেঞ্চারের অধীনে শিমুল এন্টারপ্রাইজ, নাবিল ট্রেডিং এনজিআই ট্রেড ভেঞ্চারের মতো প্রতিষ্ঠান রয়েছে। নাবিল এগ্রোর অধীনে রয়েছে নাবিল ফিড মিলস, আইএনএনএ এগ্রোটেক লিমিটেড, নাবা ক্রপ কেয়ার লিমিটেডের মতো প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। নাবিল ফুড এন্ড বেভারেজেসের অধীনে রয়েছে নাবিল অটো রাইস মিল, ফাওয়ার মিল, ডাল মিল, ভোজ্য তেল মিল ইত্যাদি। এছাড়াও নাবিল ট্রান্সপোর্ট, নাবিল কোল্ড স্টোরেজ, রেজা কোল্ড স্টোরেজ এবং আনোয়ারা জাহান বকস ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে নাবিল গ্রুপ দেশের পরিসেবা খাতেও সুনাম অর্জন করেছে।
২০০৬ সালে নাবিল গ্রুপের যাত্রা শুরু হয়েছিল ট্রেডিংএর মাধ্যমে,
যার অগ্রদূত ছিল শিমুল এন্টারপ্রাইজ। দেশের আভ্যন্তরীন সাফল্যের পর ২০০৭ সালে নাবিল গ্রুপ তার ট্রেড ভেঞ্চারকে বিশ্ববাজারে লাভজনক করতে উল্লেখযোগ্য পরিমান কাজ করে। যার ফলে ২০০৮ সালে নাবিল ট্রান্সপোর্টের মাধ্যমে ফুড সাপ্লাই চেইনে যাত্রা হয় নাবিল গ্রুপের।
নাবিল গ্রুপের পরবর্তী লক্ষ্য ছিল দেশের খাদ্য পন্য ইন্ডাস্ট্রি। সেই ভাবনা থেকেই নাবিল এগ্রো চাল কেন্দ্রিক ব্যবসার পরিকল্পনা গ্রহন করে। চাল বাংলাদেশের সাড়ে তেরো কোটি মানুষের প্রধান খাবার। দেশের গ্রামীন কর্মসংস্থার ৪৮ শতাংশ ধান চাষের উপর নির্ভরশীল। ধান দেশীয় কৃষিবাজারের ৫০ জুড়ে রয়েছে এবং জাতীয় আয়ের ৬ষ্ঠ নম্বরে অবস্থান করছে। ধানের গুরুত্ব অনুধাবন করে নাবিল গ্রুপ অটো রাইস মিল প্রতিষ্ঠা করে যা ২০০৬ সাল থেকেই বাংলাদেশের খাদ্য-শস্যের বাজারে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা পালন করে আসছে।
২০১৪ সালে নাবিল ময়দা সম্পর্কিত খাদ্য উৎপাদনে মনোনিবেশ করে। জলবায়ু, সংস্কৃতি, বাণিজ্য, এবং উৎপাদন একটি দেশের প্রধান খাদ্যের মৌলিক নির্ধারক। ময়দা স্পষ্টতই বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্য। যা বাংলাদেশের খাদ্য সংস্কৃতিরও একটি অংশ। সেই ধারাবাহিকতায় নাবিল গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করে স্বয়ংক্রিয় ময়দা মিল যাতে প্রচলিত ময়দা মিলের তুলনায় অনেক বেশি আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার রয়েছে। এই উন্নত গ্যাজেটগুলি ব্যবহারের কিছু সুবিধা রয়েছে যা এনালগ পদ্ধতির মিলের চেয়ে স্বয়ংক্রিয় মিলকে বেশি উন্নত করেছে। যেমন এর কাঁচামাল ভাঙানোর ক্ষমতা ও একুরেসি এনালগ মেশিনের চেয়ে বেশি। হাতের স্পর্শ না থাকায় ময়দা হয় হাইজেনিক হয়। এই গ্যাজেটগুলি কাঁচামাল ভাঙানোর সময় তাপ নিয়ন্ত্রন করতে পারে, ফলে ময়দার পুষ্টিগুন অক্ষুন্ন থাকে। এদেরকে ইকো-ফ্রেন্ডলি প্রযুক্তিতে তৈরি করা হয়েছে, তাই পরিবেশ রক্ষার্থে এরা কার্যকরী। আজ নাবিল গ্রুপ প্রতিদিন দেশের লক্ষ লক্ষ গ্রাহকের ময়দার চাহিদা পুরন করে থাকে। এছাড়াও খাদ্য পণ্য সংরক্ষনের জন্য এ বছর নাবিল গ্রুপ নির্মান করেছে নাবিল কোল্ড স্টোরেজ।
চাল, ময়দা ও ফিড মিলে সাফল্যের পর নাবিল গ্রুপ ২০১৮ সালে একাধিক চাল ও ময়দার মিল চালু করে। এরপর শুরু খাদ্য-পণ্য ইন্ডাস্ট্রিতে নিজেদেরকে অন্য লেভেলে নিয়ে যাওয়ার মিশন। সেখান থেকেই ২০২১ সালে নাবিল গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করে নাবিল ডাল মিল এবং নাবা ফুডস। অল্পদিনের মধ্যেই নাবা ফুডের ব্র্যান্ড ফুডেলা দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।
খাদ্য-পণ্য ইন্ডাস্ট্রিতে সুনাম ও সাফল্যের সাথে এগিয়ে চলছে নাবিল গ্রুপ
২০২২ সালে তারা আইএনএনএ এগ্রোটেক এর অধীনে প্রতিষ্ঠা করে নাবা ক্রপ কেয়ার লিমিটেড। যার মাধ্যমে নাবিল গ্রুপ তার সকল প্রোডাক্টের উৎপাদন প্রক্রিয়া একেবারে শুরু থেকে পর্যবেক্ষন করতে সহায়তা। মাত্র দুই বছরের মধ্যেই নাবিল গ্রুপ তার টেকনোলজি এবং উৎপাদনের স্বচ্ছতায় অভূতপূর্ব সাফল্য দেখিয়েছে।
দ্রুত পচনশীল খাদ্য-পণ্যের ব্যবসায় পণ্যের পচন ঠেকাতে ও স্বাস্থ্যকর রাখতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় কোল্ড স্টোরেজ। যা পণ্যকে সঠিক তাপমাত্রা দিয়ে ব্যাক্টেরিয়া ও অন্যান্য জীবানু থেকে সুরক্ষিত রাখে। এই সমস্যাকে সামনে রেখে নাবিল ইন্ডাস্ট্রিজ ২০২৪ সাথে যমুনা কোল্ড স্টোরেজ ও রেজা কোল্ড স্টোরেজ নামে আরও দুইটি কোল্ডস্টোরেজ প্রতিষ্ঠা করে।
নাবিল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের স্বপ্ন হলো কৃষিখাতে সম্পুর্ন স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ে তোলা। তাই নাবিল গ্রুপের গবেষনা দল নিজস্ব গবেষনাগারে ভুট্টা, টমেটো, বেগুন ও মটরশুটিসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর সবজির উন্নত বীজ তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে নাবিল তৈরি করেছে উন্নত প্রযুক্তির এগ্রিকালচার গ্রিন হাউজ। যা একটি পরিচ্ছন্ন, স্বনির্ভর ও ইকো ফ্রেন্ডলি বাংলাদেশ উপহার দিতে বিশেষ ভুমিকা রাখবে।
পথচলার প্রায় দুই দশকে পণ্যের গুনগত মান ছিল নাবিল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের প্রধান শক্তি। যা একটি স্বাস্থ্যকর বাংলাদেশ গড়তে এবং বাংলাদেশের কৃষি খাতকে আরও বহুদুর নিয়ে যেতে কাজ করে যাবে।