নাবিল অটো রাইস মিলস হল নাবিল গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজের একটি প্রতিষ্ঠান যা চাল নিয়ে কাজ করে। নাবিল অটো রাইস মিল নাবিল গ্রুপের ফুড অ্যান্ড বেভারেজের একটি প্রতিষ্ঠান। চাল বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় পঞ্চাশ শতাংশের মৌলিক খাদ্য। যা প্রধানত চীন,ভারত, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ এবং ভিয়েতনামের মানুষ সবচেয়ে বেশি গ্রহন করে থাকে। ইউএসডিএ (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ) জানাচ্ছে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫০০ মিলিয়ন টন চাল উৎপাদিত হয়েছে। মূল উৎপাদনের ৩০% শেয়ার নিয়ে শীর্ষে রয়েছে চীন। ভারতের অংশগ্রহন ২৪% , ইন্দোনেশিয়ার ৭%, বাংলাদেশ ৭%,, ভিয়েতনাম ৫% এবং থাইল্যান্ড ৪%। বাজার পর্যবেক্ষন করলে দেখা যায়, বিশ্বব্যাপী চাল-রপ্তানিকারক দেশগুলির মধ্যে রয়েছে ভারত, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান এবং ব্রাজিল। নাবিল গ্রুপ লক্ষ্য করে রপ্তানির বিপরীতে, চাল আমদানির ক্ষেত্র এখনো অসংগঠিত রয়ে গেছে। কারন রপ্তানিকারক দেশের সংখ্যা সীমিত তবে আমদানিকারক দেশের সংখ্যা অনেক বেশি।
চাল বাংলাদেশের সাড়ে তেরো কোটি মানুষের প্রধান খাবার। ভাত গড়ে একেকজন বাংলাদেশির মোট খাদ্য গ্রহনের দুই তৃতীয়াংশ। দেশের গ্রামীন কর্মসংস্থার ৪৮ শতাংশ ধান চাষের উপর নির্ভরশীল। ধান বাংলাদেশের প্রধান খাদ্য পণ্য। ধান দেশীয় কৃষিবাজারের ১৫% জুড়ে রয়েছে এবং জাতীয় আয়ের ৬ষ্ঠ নম্বরে অবস্থান করছে। ধানের গুরুত্ব বুঝতে পেরে নাবিল গ্রুপ ২০১২ সালে নাবিল অটো রাইস মিল প্রতিষ্ঠা করে। বর্তমানে নাবিল রাইস মিলের দুইটি শাখা রয়েছে। দ্বিতীয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয় ২০১৮ সালে। দুই মিল থেকে নাবিল গ্রুপ প্রতিদিন ১২০০ মেট্রিক টন চাল প্রস্তুত করে থাকে।
উৎপাদনের ধরন বিবেচনায় ইন্ডাস্ট্রিতে ৩ ধরনের রাইস মিল রয়েছে। স্বয়ংক্রিয় সুবিধা সম্পন্ন রাইস মিল, আধা স্বয়ংক্রিয় রাইস মিল আর প্রচলিত ধান মাড়ানো মিল। সময়ের সাথে সাথে বাংলাদেশের রাইস মিলের সংস্কৃতিও বদলে যাচ্ছে। ঢেকির ব্যবহার ফুরিয়ে এসেছে। জায়গা করে নিয়েছে স্বয়ংক্রিয় মেশিন মিল। বর্তমানে জিডিপি পার ক্যাপিটা বৃদ্ধি পাওয়াতে দেশের খাদ্য সংস্কৃতিতে চালের প্রক্রিয়াজাত সংস্করন গ্রাহকের নজর কেড়েছে। যার কিছু ইউনিক সুবিধা রয়েছে যেটা এনালগ প্রক্রিয়াজাত চালে সম্ভব হয় না। এই চাল রান্নায় সময় কম ব্যয় হয়, পাথরকনা মুক্ত হয় ও দেখতে আকর্ষনীয় হয়। এসব লক্ষ্যকে সামনে রেখেই ২০১২ সালে নাবিল গ্রুপ আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন অটো রাইস মিল প্রতিষ্ঠা করে দেশের রাইস মিল ইন্ডাস্ট্রিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। নাবিল অটো মিল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রাজশাহী জেলার পবা উপজেলার নাবিল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে। যা প্রতিনিয়ত উন্নত মান ও সুগন্ধি সম্পন্ন কাটারিভোগ, আতপ, গুটি স্বর্ন ইত্যাদি চাল উৎপাদন করে।
একটি স্বয়ংক্রিয় মিলে, চাল মিলিং প্রক্রিয়ার সমস্ত ধাপ স্বয়ংক্রিয় মেশিন দ্বারা পরিচালিত হয়।
একটি স্বয়ংক্রিয় চাল মিলের প্রাথমিক উপাদান হল পারবয়েলিং ইউনিট। পারবয়েলিং এর প্রাথমিক কাজ ধান সিদ্ধ করা এবং পরবর্তী প্রক্রিয়ার জন্য ধানকে শুঁকিয়ে ফেলা। এই শুকনো ধান অটোমেটেড রাইস মিলগুলিতে পর্যায়ক্রমে প্রক্রিয়াকরণের মধ্য দিয়ে যায়। ধান বাছা, ধানের খোসা ছাড়ানো, ভুসি আলাদা করা, পাথর পরিস্কার, গ্রেডিং, পলিশিং, চাল বাছাই , ওজন এবং ব্যাগিং-এই ধাপগুলিতে অটো রাইস মিল কোনো রকম হাতের স্পর্শ ছাড়াই স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে। এছাড়াও অটো রাইস মিল বাদামী চাল থেকে ভুসি আলাদা করা, ছোট সাইজের কনা পরিস্কার করা, জীবানু দূর কথা, একসাথে লেগে যাওয়া চাল আলাদা করা ও চালের রঙ উজ্জ্বল করা ইত্যাদি বিষয়ে কাজ করে থাকে। যা গ্রাহককে একটি প্রিমিয়াম চালের নিশ্চয়তা দেয়। এই লক্ষ্য পূরনে নাবিল গ্রুপের একটি অটো রাইস মিল প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল। বর্তমানে নাবিল গ্রুপের অধীনে দুইটি অটোমেটিক রাইস মিল রয়েছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি বড় অংশ ধান চাষের উপর নির্ভরশীল। যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা এবং কর্মসংস্থান উভয় ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশ চাল নির্ভর দেশ এবং এদেশের মোট কৃষির ১৫ শতাংশই ধান। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন চাল উৎপাদন প্রযুক্তি বাংলাদেশকে রপ্তানি বাজারেও পৌঁছাতে পারে, যা বৈদেশিক মুদ্রার মুনাফা বাড়াতে এবং অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে কাজ করবে। নাবিল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের আধুনিক প্রযুক্তিতে অটো রাইস মিল স্থাপন বাংলাদেশের খাদ্য শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। গ্রাহকের সন্তুষ্টি আর উন্নত চালের নিশ্চয়তা নিয়ে নাবিল গ্রুপ এগিয়ে যাচ্ছে স্বপ্নপূরণের দিকে।